স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত প্রার্থনা ও উপাসনা চালিয়ে যাচ্ছেন অবিরাম। অথচ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের গঙ্গানগর গ্রামের মন্দিরের চিত্র পুরোপুরি উল্টো। এ মন্দিরে প্রায় চার মাস ধরে উপাসনার পরিবর্তে চলছে তাস আর লুডু খেলার আসর।
জননী সংসদ, গঙ্গানগর পূজা মন্ডপ ও মন্দিরের বারান্দায় বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রারম্ভ থেকে এপর্যন্ত প্রত্যেক রাতের ৯টা হতে গভীর রাত অবধি তাস ও লুডুর আড্ডা চলছে। এমনিক এর আড়ালে অবিরত চলছে জোয়া খেলাও। মন্দিরটি রাস্তা সংলগ্ন হবার কারণে খেলার দৃশ্য খুব সহজে সরাসরি পথচারী সহ সকলের নজরে আসে। কিন্তু মন্দিরের কমিটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এসব অনৈতিক কার্যকলাপ সংঘটিত হয়ে আসলেও তারা নিরব ভূমিকা পালন করে আসছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মন্দির কমিটির সভাপতি সুশান্ত বসাকের ছোট ভাই সুজন বসাক, সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দেবের ছোট ভাই উজ্জ্বল দেবসহ তাদেরই আত্মীয়-স্বজনরা মন্দিরের ভেতরে এসব কু-কর্মে লিপ্ত। এজন্যই মূলত মন্দির কমিটি নিরব ভূমিকায় রয়েছেন। এছাড়াও একই এলাকার মিলন বসাক, দিপক বসাক, বিশু বাবু, দিলিপ দেব সহ আরো কয়েকজন তাস ও লুডুর আসরে নিয়মিত বসেন বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী। পার্শ্ববর্তী গ্রামের পথচারীগণ দৃষ্টিকটু বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনাও করছেন। কিন্তু আসরে অংশগ্রহণকারীদের ভ্রুক্ষেপ নেই ।
গঙ্গানগর ছোট্ট গ্রাম হলেও এখানের প্রায় মানুষই শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। এলাকায় সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, শিক্ষক, এডভোকেট সহ নানান পেশার মানুষের বসবাস থাকলেও রহস্যজনক কারণে তারা কেউই এ ঘৃণ্যকাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন না। তবে চায়ের স্টল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে এব্যাপারে কানাঘুঁষা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু তারা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদও করছেন না।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা গঙ্গানগর গ্রামের জনি বসাক বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে আমি ক্লিয়ার না। তবে এব্যাপারে সভাপতি মহোদয়ের সাথে কথা বলব।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্দিরের অদূরে বসবাসকারী একজন জানান- তারা গভীর রাত পর্যন্ত খেলে। তারা নাকি মন্দির পাহাড়া দেয় আর টাইম পাস করার জন্য খেলে। তিনি আরো বলেন- “যারা খেলেন, তারা অনেক বড় পর্যায়ের এজন্য কিছু বলতে পারি না। তবে মন্দিরের বারান্দায় এমন কাজ করা ঠিক না।”
নাম প্রকাশে অনীহা জানিয়ে মন্দিরের নিকটবর্তী একজন সচেতন ও সুশীল সমাজের সদস্য জানান- মন্দিরের সভাপতি, সেক্রেটারির আত্মীয়-স্বজনরা এই অনৈতিক কর্মকান্ড প্রতিনিয়ত করে আসছেন। চাইলেও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারিনা। তারা রাত ৯টা থেকে ১২টা-১টা পর্যন্ত বসে তাস খেলে।
এব্যাপারে মন্দির কমিটির সভাপতি সুশান্ত বাসকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- আমি শুনেছি, ছোট বাচ্চারা লুডু খেলে। পরে আমি তাদের সাবধান করেছি। কিন্তু ইদানীংয়ের বিষয়ে কিছু জানিনা। আপনি যখন বলেছেন, আমি শক্তভাবে এই অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ করবো।
মন্দিরের মতো পবিত্র জায়গায় এমন নিকৃষ্ট কাজ হোক, তা কেউই চান না। তবে প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ না করলেও এমন কু-কর্ম বন্ধে অনেকেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।